ফুটবলের ইতিহাসে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ধ্রুপদী লড়াই বরাবরই নাড়া দিয়েছে সমর্থকদের। শর্ষে ফুল রঙা হলুদ আর আকাশি-নীল সাদা রঙের জার্সিতে সয়লাব হয়ে যায় স্টেডিয়ামের গ্যালারি। কেবল গ্যালারি? ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সুপারক্ল্যাসিকো লড়াইয়ের উত্তাপ পাওয়া যায় হাজার হাজার মাইল দূর থেকেও। ল্যাটিন আমেরিকায় অনুষ্ঠিত ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কমনরুমে দুই ভাগ হয়ে খেলা দেখতে বসে যায় পড়ুয়ারা। সাধারণ সুপারক্ল্যাসিকো নিয়েই আগ্রহটা আকাশের উচ্চতায়। আর বিশ্বকাপ হলে? আরও এক ধাপ এগিয়ে, বিশ্বকাপ ফাইনাল হলে?
বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ধ্রুপদী লড়াই দেখার আগ্রহটা সবার। সে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক হোক বা না হোক। এমন একটা ফাইনাল যে পুরো ফুটবল দুনিয়ারই আরাধ্য! রাশিয়া বিশ্বকাপের সূচিই সেই সুযোগ নিয়ে এসেছে। নেইমারের ব্রাজিল আর মেসির আর্জেন্টিনা সব বাধা ঠিকঠাক পাড়ি দিতে পারলে ফাইনালে দেখা হতে পারে ফুটবলের দুই পুরনো যোদ্ধার। ল্যাটিন ফুটবলের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হতে পারেন ভক্তরা। সুপারক্ল্যাসিকোর দেখা মিলতে পারে বিশ্বকাপের ২১তম ফাইনালে!
গত ২০টি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত মঞ্চে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই দেখেছেন সমর্থকরা কেবল চার বার। এর মধ্যে ব্রাজিল জিতেছে দুবার। আর্জেন্টিনা একবার। একবার ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে দুই দল। চারটা লড়াইয়ের মধ্যে দুইটা ছিল গ্রুপ পর্বে, দুইটা দ্বিতীয় রাউন্ডে। এর চেয়ে সামনে এগিয়ে কখনোই দুই দল মুখোমুখি হয়নি। তবে এবারের বিশ্বকাপ দারুণ এক সুযোগ নিয়ে এসেছে।
ডি গ্রুপে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ার। র্যাঙ্কিং এবং অভিজ্ঞতা সব দিক থেকেই এই গ্রুপে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। হোসে মরিনহোর মতো ফুটবল বোদ্ধারা বলছেন, ডি গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে আর্জেন্টিনাই। মেসিদেরকে ডি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ধরে নিলে নেইমারদেরও ই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ধরতে হয়। হোসে মরিনহোও তাই বলছেন। ই গ্রুপে ব্রাজিল মুখোমুখি হবে সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া এবং কোস্টারিকার। নেইমার পুরো ফিট থেকে খেলতে পারলে ব্রাজিলকে রুখবে, সাধ্য কার! ডি ও ই গ্রুপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হলে দুই দলের ফাইনালের আগে আর দেখা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে সি গ্রুপ রানার্সআপের। সি গ্রুপে ফ্রান্স, পেরু, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হচ্ছে। এই গ্রুপে ফ্রান্সকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ধরে নিলে রানার্সআপ হতে পারে অন্য তিন দলের যে কেউ। এক্ষেত্রে কেউ অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে রাখছেন। কেউবা এগিয়ে রাখছেন পেরুকে। আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডের বাধামুক্ত হলে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে বি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং এ গ্রুপ রানার্সআপের মধ্যকার লড়াইয়ে বিজয়ী দলের। বি গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে স্পেন। আর্জেন্টিনা এই বাধাটা অতিক্রম করলে সেমিফাইনালে দেখা হতে পারে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির সঙ্গে। গতবারের ফাইনালে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে আর্জেন্টিনা ফাইনালে পৌঁছতে পারলেই কেবল সুপারক্ল্যাসিকো হতে পারে রাশিয়ায়। অবশ্য ব্রাজিলকেও সব বাধা অতিক্রম করে আসতে হবে ফাইনাল পর্যন্ত।
ই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি হবে এফ গ্রুপ রানার্সআপের। এফ গ্রুপে জার্মানি ছাড়াও আছে মেক্সিকো, সুইডেন এবং দক্ষিণ কোরিয়া। এই গ্রুপে জার্মানিকে চ্যাম্পিয়ন ধরে নিলে মেক্সিকো, সুইডেন কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার যে কোনো একটা হতে পারে রানার্সআপ। ব্রাজিলের জন্য তিনটা দলই খুব সহজ শিকার! কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল মুখোমুখি হবে জি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং এইচ গ্রুপ রানার্সআপের মধ্যকার বিজয়ী দলের। জি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হতে পারে বেলজিয়াম অথবা ইংল্যান্ড। ব্রাজিলের জন্য দুইটা দলই মোটামুটি সহজ শিকার। সেমিফাইনালে নেইমাররা মুখোমুখি হতে পারেন সি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের। অবশ্য ফ্রান্সকেও সব বাধা অতিক্রম করে শেষ চারে আসতে হবে। নেইমাররা সেমিতে ফ্রান্সকে হারালেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল! বিশ্বকাপ ফাইনালের আলাদা একটা উত্তাপ আছে। সেই উত্তাপে সুপারক্ল্যাসিকো যোগ হলে, তা হবে ফুটবল দুনিয়ার জন্য সেরা উপহার।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই হতে পারে সেমিতেও। দুই দলের কোনো একটা যদি গ্রুপে রানার্সআপ হয় তাহলেই শেষ চারে লড়াই হবে মেসি-নেইমারের। আবার দুই দলই গ্রুপ পর্বে রানার্সআপ হলে ফাইনাল হতে পারে তাদের মিলনকেন্দ্র। অবশ্য দুই দলই সেমিফাইনাল হেরে গেলে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও হতে পারে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াই।